টেকনাফ সীমান্তের হুন্ডি সাম্রাজ্য এখন ওসমানের হাতে

তোফায়েল আহমেদ, কালেরকন্ঠ •

টেকনাফ সীমান্তে এখনো হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধভাবে ইয়াবার টাকা পাচার অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তের চিহ্নিত হুন্ডি গডফাদাররা আত্মগোপনে গেলেও নতুন করে একজন হুন্ডি সম্রাট দাপটের সঙ্গে একাজে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সীমান্তের প্রভাবশালী এক সাবেক জনপ্রতিনিধি এবং ইয়াবা ডনের ছত্রছায়ায় থেকে টেকনাফের হুন্ডি সাম্রাজ্যের একক নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন এই হুন্ডি সম্রাট। মোহাম্মদ ওসমান নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেবল টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এমনকি তিনি এসব মামলার পলাতক আসামি হলেও প্রকাশ্যে হুন্ডি সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়ার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ ওসমান (৩৬) পুলিশের তালিকাভুক্ত একজন চিহ্নিত হুন্ডি কারবারি। টেকনাফ সীমান্তের বহুল পরিচিত হুন্ডি কারবারি জাফর আলম প্রকাশ টিটি জাফরের অধীনে দীর্ঘদিন ধরে ওসমান হুন্ডি কারবার চালিয়ে আসছেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ শনিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন- ‘হুন্ডি কারবারি মোহাম্মদ ওসমানের নামে কেবল জুলাই মাসেই একে একে তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত এ সম্রাটের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলাও। ’ ওসি আরো বলেন, ওসমান একজন হুন্ডি কারবারি। পুলিশ তাকে ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত ১০২ ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের পর আলোচনায় আসে সীমান্তের হুন্ডি কারবারিদের নামধাম। আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা কারবারিরাই পুলিশের কাছে একে একে ২১ জন হুন্ডি সম্রাটের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন। ইয়াবা কারবারিরা পুলিশকে জানান, ২১ জন বড় এবং ছোটখাট আরো মিলে কমপক্ষে অর্ধশত হুন্ডি কারবারি সীমান্তের পুরো ইয়াবা কারবারের টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।

ইয়াবা কারবারিরা এসব হুন্ডি কারবারিদের নাম পরিচয় প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তারা সবাই গা ঢাকা দেয়। এমনকি হুন্ডি কারবারি টিটি জাফরসহ আরো বড় মাপের কয়েকজন দেশ থেকে পালিয়ে দুবাই এবং সৌদি আরব পালিয়ে যান। টেকনাফ সীমান্তের হুন্ডি কারবারিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় ইয়াবা কারবারিরা বিপাকে পড়ে যান।

এসব কারণে ওসমান নামের এই ব্যক্তি নতুন করে হুন্ডির কারবার শুরু করেন। এমনকি বেশ কিছুদিন ধরে কারবারি ওসমান রয়েছেন একদম প্রকাশ্যে। অভিযোগ রয়েছে, ওসমান সীমান্তের পুরো হুন্ডি সাম্রাজ্যের একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সীমান্তের একজন বিতর্কিত সাবেক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থেকে দাপটের সঙ্গে ওসমান হুন্ডি কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার জন্য ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি ওসমানের হুন্ডি ব্যবসার অংশিদার বলেও কথিত রয়েছে। অথচ টেকনাফ থানা পুলিশের দায়ের হওয়া জুলাই মাসের তিনটি মামলার আসামি এই ওসমান। এছাড়া রয়েছে আরো ৫টির বেশি মামলা। এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে হুন্ডি কারবার পরিচালনা নিয়ে রয়েছে নানা কথাও।

এসব বিষয় নিয়ে মোহাম্মদ ওসমানের সঙ্গে শনিবার রাত ৯-২৫ মিনিটে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন- ‘আসলে আমি হুন্ডি কারবারে জড়িত নেই। হুন্ডি কারবার আমি কোনো দিন করিনি। আমার প্রতিপক্ষ এসব মিথ্যা রটনা করছে আমার বিরুদ্ধে। ’ তিনি আরো বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তিনি আইনগতভাবে তা মোকাবেলা করবেন।